বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস বাঙ্গালি জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের দ্বারা ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে আরম্ভ হয়। এই যুদ্ধে বাংলাদেশ, পাকিস্তানের সামরিক অধীন হওয়া ইসলামী প্রজাতন্ত্রী পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে।
গণ-অভ্যুত্থান; বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস
১৯৬৮ সালে পূর্ব পাকিস্তানে বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইয়ুববিরোধী আন্দোলন জোরদার হতে থাকে এবং ‘৬৯ সালের শুরু থেকে আইয়ুব খানের পদত্যাগ পর্যন্ত গণ-আন্দোলন ব্যাপক রূপ ধারণ করে গণ-অভ্যুত্থানে পরিণত হয়।
আইয়ুব খানের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৯৬৯ সালের ৫ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি তোফায়েল আহমদকে সভাপতি করে একটি সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ SAC (Student Action Committee) গঠন করে। ‘ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের’ পক্ষ থেকে ১১- হাড় দফা দাবি ঘোষণা করা হয়। মূলত ৬-দফার বিস্তারিত রূপই ১১ দফা।
৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের ৮টি রাজনৈতিক দল মিলে ‘গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদ’ DAC (Democratic Action Committee) নামক মোর্চা গঠন করে এবং ৮-দফা দাবি উত্থাপন করে, যাতে ৬- দফা ও ১১-দফার সমর্থন পাওয়া যায় ।
পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে DAC ও SAC ২০ জানুয়ারি সারা পূর্ব বাংলায় ধর্মঘট আহ্বান করে। ওইদিন সর্বাত্মক হরতাল পালনকালে একজন পুলিশ অফিসারের গুলিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান নিহত হন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস
২৪ জানুয়ারি, ১৯৬৯ ঢাকার বকশীবাজারে অবস্থিত নবকুমার ইনস্টিটিউটের নবম শ্রেণির ছাত্র মতিউর রহমান পুলিশের গুলিতে শহিদ হন । ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ১৭নং আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হককে গুলি করে হত্যা করা হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও রসায়ন চা বিভাগের অধ্যাপক শামসুজ্জোহাকে হত্যা করা হয় ।
২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯ ব্যাপক গণ-আন্দোলনের চাপের মুখে আইয়ুব জান্নাত খান মামলা প্রত্যাহার করে শেখ মুজিবসহ অন্য বন্দিদের মুক্তি প্রদান করতে বাধ্য হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ জনতার সমর্থনে শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধি প্রদান করে । ৫ ডিসেম্বর, ১৯৬৯ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের নাম রাখেন বাংলাদেশ।[বি.দ্র. : * ২০ জানুয়ারি ‘আসাদ দিবস’ পালন করা হয়। ২৪ জানুয়ারি ‘গণ-অভ্যুত্থান’ দিবস পালন করা হয়।]
আসাদ গেটের পূর্ব নাম ছিল- আইয়ুব গেট। আইয়ুব খান ক্ষমতা হস্তান্তর করেন- সেনাপ্রধান জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের নিকট। গণ-অভ্যুত্থানের নায়ক বলা হয়- তোফায়েল আহমদকে। কখন গভর্নর মোনায়েম খান অপসারিত হন- ২০ মার্চ ১৯৬৯। আইয়ুব খান পদত্যাগ করেন- ২৫ মার্চ, ১৯৬৯।
SAC-এর ১১ দফা ঘোষিত হয়েছিল- ৫ জানুয়ারি, ১৯৬৯। ১১ দফার মধ্যে কোন দফায় ৬ দফা দাবি সন্নিবেশিত ছিল- ৩ নম্বর দফায়। ১১ দফা আন্দোলনের সময় সরকারি ছাত্র-সংগঠন ছিল- এনএসএফ। ১১ দফা আন্দোলনের সময় ডাকসুর ভিপি ছিলেন- তোফায়েল আহমেদ। ১১ দফা আন্দোলনে প্রথম শহিদ- আসাদুজ্জামান।
ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা গ্রহণ করেন- ২৫ মার্চ, ১৯৬৯। গণ-আন্দোলনকে গণ-অভ্যুত্থানে পরিণত করেন- মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী উত্তেজনাপূর্ণ ভাষণ প্রদান করেন- ৩ জানুয়ারি, ১৯৬৮।
১৯৬৯ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি ছিলেন- তোফায়েল আহমদ। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়- আওয়ামী লীগের ৬ দফা, সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা এবং গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদের ৮ দফার ওপর ভিত্তি করে।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন; স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস
৭ ডিসেম্বর, ১৯৭০ জাতীয় পরিষদের নির্বাচন এবং ১৭ ডিসেম্বর ১৯৭০ প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক ছিল নৌকা এবং নির্বাচনি কর্মসূচি ছিল ৬ দফা। এই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় পরিষদের ১১১নং আসন (ঢাকা-৮) থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং জয় লাভ করেন ।
বি.দ্র. : ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর পূর্ব পাকিস্তানের কিছু অঞ্চলে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস হওয়ায় ওইসব অঞ্চলে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
ইয়াহিয়া খান নির্বাচিত জন প্রতিনিধিদের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য ২৮ মার্চ, ১৯৭০ Legal Framework Order (LFO) ঘোষণা করেন। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদে – ১৬২টি আসনের মধ্যে ১৬০টি আসন পায়। পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি আসনে ১৬২নং আসন চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় (স্বতন্ত্র) এবং ময়মনসিংহ-৮ আসন নুরুল আমিন (PDP) লাভ করেন।
সংরক্ষিত ৭টি মহিলা আসনসহ আওয়ামী লীগ মোট ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন লাভ করে জাতীয় পরিষদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। আবার পূর্ব পাকিস্তানে প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৮৮টি আসন এবং সংরক্ষিত মহিলা আসনের ১০টিসহ মোট ৩১০টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ মোট ২৯৮টি আসন পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।
অপরপক্ষে জুলফিকার আলী ভুট্টোর নেতৃত্বাধীন পিপিপি জাতীয় পরিষদের পশ্চিম পাকিস্তান অংশের ১৪৪টি আসনের মধ্যে ৮৮টি (সংরক্ষিত ৫টি মহিলা আসনসহ) আসন লাভ করে । ৫ জাতীয় পরিষদের সদস্যদের এমএনএ (MNA) এবং প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের এমপিএ (MPA) বলা হতো ।
মোট প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদে ৭৫.১০% এবং প্রাদেশিক পরিষদে ৭০.৪৮% ভোট পায়। এ জাতীয় পরিষদের মোট আসন ছিল- ৩১৩টি (১৩টি সংরক্ষিত মহিলা আসনসহ)। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের কোন পোস্টার জনপ্রিয়তা পায়- “পূর্ব বাংলা শ্মশান কেন?”
শেখ মুজিব কখন নির্বাচিত সদস্যদের শপথ পড়ান- ৩ জানুয়ারি, ১৯৭১ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের MNA এবং MPA দের ছয় দফার ভিত্তিতে শপথ পড়ান । এই দিন শেখ মুজিব ১৭টি পায়রা উড়িয়েছেন, যা ছাত্রদের এগারো দফা ও ছয় দফাকে নির্দেশ করে।
পাকিস্তানে গণতান্ত্রিকভাবে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়- ১৯৭০ সালে & পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম সাধারণ নির্বাচন ছিল- ১৯৭০ সালের নির্বাচন। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে পিপিপির নেতৃত্ব দেন- জুলফিকার আলী ভুট্টো। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেন- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রতীক ছিল- নৌকা। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদে নির্দলীয় প্রার্থীরা জয়ী হন- ৭টি আসনে। পাকিস্তানের ইতিহাসে সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের মাধ্যমে প্রথম নির্বাচন কোনটি?- ১৯৭০ সালের নির্বাচন। বাঙালি জাতির ইতিহাসে প্রথম স্বাধীন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন- ১৯৭০ সালের নির্বাচন।
১৯৭০ সালের কত তারিখে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়?- ৭ ডিসেম্বর জাতীয় পরিষদ ও ১৭ ডিসেম্বর প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তানে জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়গ্রস্ত এলাকায় কখন ভোট অনুষ্ঠিত হয়- ১৯৭১ সালের ১৭ জানুয়ারি।
অসহযোগ আন্দোলন, ১৯৭১
১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত অসহযোগ আন্দোলন ছিল বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের প্রথম পর্ব। ১৯৭০-এর নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন সামরিক সরকারের অনীহা ছিল অসহযোগ আন্দোলনের প্রধান কারণ ।
১ মার্চ, ১৯৭১ : প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ৩ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২ মার্চ ঢাকা শহর এবং ৩ মার্চ সারাদেশে হরতাল আহ্বান করেন। ২ মার্চ, ১৯৭১ : আ স ম আবদুর রব বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করেন ।
৩ মার্চ, ১৯৭১ : ছাত্রলীগের সেক্রেটারি শাহজাহান সিরাজ এবং ডাকসুর ভিপি আ স ম আবদুর রব বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে স্বাধীনতার ইশতেহার ঘোষণা করলে বঙ্গবন্ধু অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দেন, যা ২৫ মার্চ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। ডাকসুর ভিপি আ স ম আবদুর রব শেখ মুজিবকে জাতির পিতা উপাধি দেন । ইকবাল হলের নাম হয় সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ।
৪ মার্চ, ১৯৭১ : পাকিস্তান রেডিওর নাম বাংলাদেশ বেতার এবং পাকিস্তান টিভির নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ টিভি। ৬ মার্চ, ১৯৭১ : প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান, লে. জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেন। (প্রধান বিচারপতি বিএ সিদ্দিকী টিক্কা খানকে শপথ পড়াতে অস্বীকার করেন)।
৭ মার্চ, ১৯৭১ : ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ দেন । ১৫ মার্চ, ১৯৭১ : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ অসহযোগ আন্দোলন পরিচালনার জন্য ৩৫টি বিধি প্রণয়ন করেন এবং তা বঙ্গবন্ধু ১৫ মার্চ ঘোষণা করেন।
১৬ মার্চ, ১৯৭১ : ইয়াহিয়া খানের সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ১৭ মার্চ, ১৯৭১ : লে. জেনারেল টিক্কা খান, মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী অপারেশন সার্চলাইট চূড়ান্ত করেন । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস
১৯ মার্চ, ১৯৭১ : পূর্ব পাকিস্তান ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সৈন্যদের নিরস্ত্রীকরণ শুরু হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ প্রথম গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরে শুরু হয়। পাক বাহিনী জনতার উপর গুলি বর্ষণ করে ২০ জনকে হত্যা করে এবং ১৫ জনকে আহত করে।
২০ মার্চ, ১৯৭১ : ইয়াহিয়া খানের সাথে শেখ মুজিবুর রহমানের পূর্ণ আলোচনা হয়। জেনারেল হামিদ এবং লে. জেনারেল টিক্কা খান অপারেশন সার্চলাইট অনুমোদন করেন । ২২ মার্চ, ১৯৭১ : ধারাবাহিক বৈঠকে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না হওয়ায় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া আবারো ২৫ মার্চের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করেন।
২৩ মার্চ, ১৯৭১ : আওয়ামী লীগ ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসের পরিবর্তে ‘প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে পালন করে হয়। সারাদেশে বাংলাদেশের নতুন পতাকা উত্তোলন করা হ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে । ঐতিহাসিক “লাহোর প্রস্তাব দিবস” পালনকালে শেখ মুজিবুর রহমান এদিনকে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণার দাবি জানান ।
২৫ মার্চ, ১৯৭১ : আওয়ামী লীগ ২৭ মার্চ দেশব্যাপী হরতাল আহ্বান করে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেন। রাত ১১টা ৩০ মিনিটে অপারেশন সার্চলাইট শুরু হয়। ২৫ মার্চে ঢাকা শহরে গণহত্যার মূল দায়িত্ব দেওয়া হয়— মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীকে।
২৫ মার্চে ঢাকার বাইরে গণহত্যার নেতৃত্ব দেন- মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা। ২৫ মার্চের গণহত্যার সার্বিক তত্ত্বাবধান করেন— গভর্নর লে. জে. টিক্কা খান। পাক-বাহিনী প্রথমে কোথায় আঘাত করে- রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে। পরে পিলখানার ইপিআর বাহিনী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা করে । দৈনিক দি পিপলস, ইত্তেফাক ও সংবাদ পত্রিকার অফিসে আগুন দেওয়া হয়।
ইকবাল হলের ২০০ ছাত্র, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকায় শিক্ষক ও তাদের পরিবারের ১২ জন নিহত হয়। পুরান ঢাকায় পুড়িয়ে হত্যা করা হয় ৭০০ লোককে। এছাড়া শুধু ঢাকায় ৭ হাজার বাঙালি নিহত হয়। [তথ্য সূত্র : ৩১ মার্চ, ১৯৭১, ডেইলি টেলিগ্রাফ]।
মধ্যরাতের পর শেখ মুজিবুর রহমান সবাইকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। জেনারেল মিঠার নির্দেশ কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল জেডএ খান ও কোম্পানি কমান্ডার মেজর বেলালের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাওয়া হয় । শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করা হয়- ২৫ মার্চ রাত ১.৩০ মিনিটে ২৫ মার্চ, ১৯৭১ শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয়- ঢাকার আদমজী স্কুলে।
২৫ মার্চ ১৯৭১ শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তারের পর করাচিতে নিয়ে যাওয়া হয়- ৩ দিন পর। ২৭ মার্চ, ১৯৭১ শেখ মুজিবকে অন্তরিণ করে রাখা হয়- ফ্লাগ স্টাফ হাউসে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস
৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ; বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তারিখে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সংবিধানের- পঞ্চম তফসিল [১৫০ (২) অনুচ্ছেদ]। ৭ মার্চের ভাষণের মূল বিষয় ছিল- ৪টি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস
বাঙালির মুক্তির নির্দেশনা হিসেবে পরিচিত- ৭ মার্চের ভাষণ। ৭ মার্চের ভাষণ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ‘বজ্রকণ্ঠ’নামে প্রচার করে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করত । ৭ মার্চের ভাষণে মোট শব্দ ছিল- ১১০৫টি।
ভাষণটির সময়সীমা : ২৩ মিনিট; তবে ভাষণটি রেকর্ড করা হয়েছিল সেটি ১৮-১৯ মিনিটের- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী (১০ মার্চ, ২০১৭ইং তারিখ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে)। ৭ মার্চের ভাষণটি রেকর্ড করেছিলেন- মোহাম্মদ আবুল খায়ের, যিনি ২০১৪ সালে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন। ৭ মার্চের ভাষণকে কীসের সাথে তুলনা করা হয়- আব্রাহাম লিংকনের গেটিসবার্গের ভাষণের সাথে ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাজনীতির কবি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়— নিউজউইক ম্যাগাজিন (৫ এপ্রিল, ১৯৭১)। – বঙ্গবন্ধুর ভাষণ কোন বইতে স্থান পেয়েছে- ইংরেজিতে অনূদিত ভাষণের বইটির নাম WE SHALL FIGTH ON THE BEACHES: THE SPEECHES THAT INSPIRED HISTORY বইটিতে ‘দ্য স্ট্রাগল দিস টাইম ইজ ট্য স্ট্রাগল ফর ইন্ডিপেন্ডেন্স’ শিরোনামে স্থান পেয়েছে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ।
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো প্যারিসে অনুষ্ঠিত এর দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে ৩০ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে ‘বিশ্ব ঐতিহ্য দলিল’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তা সংস্থাটির ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টার’-এ অন্তর্ভুক্ত করেছে।
স্বাধীনতা ঘোষণা
SIXTH SCHEDULE
[Article 150 (2)]
DECLARATION OF INDEPENDENCE
BY
THE FATHER OF THE NATION, BANGABANDHU SHEIKH MUJIBUR RAHMAN SHORTLY AFTER MIDNIGHT OF 25TH MARCH, i.e. EARLY HOURS OF 26TH MARCH, 1971 independent. I call upon the people of Bangladesh.
“This may be my last message, from today Bangladesh is wherever you might be and with whatever you have, to resist the army of occupation to the last. Your fight must go on until the last soldier of the Pakistan occupation army is expelled from the soil of Bangladesh and final victory is achieved.
Sheikh Mujibur Rahman
26 March 1971″
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন ২৬ মার্চ, ১৯৭১ সালের রাতের প্রথম প্রহরে, গ্রেপ্তার হওয়ার কিছুক্ষণ আগে । ‘বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষক’ সুপ্রিম কোর্ট এই রায় প্রদান করেন- ২১ জুন, ২০০৯।
সর্বপ্রথম বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি পাঠ করে শোনান- আওয়ামী লীগ নেতা এমএ হান্নান। শেখ মুজিব ২৫ মার্চ, ১৯৭১ গ্রেপ্তারে পূর্বে রেকর্ডকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ওয়্যারলেস যোগে কার নিকট পাঠান?- চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ নেতা জহুর আহমদ চৌধুরীর কাছে।
ইংরেজিতে রেকর্ডকৃত বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বাংলায় অনুবাদ এবং তার সাইক্লোস্টাইল কপি জনগণের নিকট বিলি করেন- জহুর আহমেদ চৌধুরী এবং এমএ হান্নান। এমএ হান্নান প্রথমবার স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন- চট্টগ্রামের আগ্রাবাদস্থ বেতারকেন্দ্র হতে। পাকবাহিনী আক্রমণ করার পর বেতার কেন্দ্রটি স্থানান্তর করে- বেতার কর্মী বেলাল মুহাম্মদ এবং আবুল কাসেম সন্দ্বীপ।
আগ্রাবাদ বেতারকেন্দ্র ট্রান্সমিট করা হয়- চট্টগ্রামের কালুরঘাটে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়- ২৬ মার্চ, ১৯৭১, সন্ধ্যা ৭.৪০ মিনিটে। চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র কী নামে পরিচিত- স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস
স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র হতে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা সম্পর্কিত ঘোষণার বাংলা অনুবাদ উপস্থাপন করেন- আবুল কাশেম সন্দ্বীপ স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র হতে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা সম্পর্কিত ঘোষণার মূল ইংরেজি ভাষণ পাঠ করেন- ওয়াপদার প্রকৌশলী আতিকুল ইসলাম
এমএ হান্নান দ্বিতীয়বার স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন- স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র হতে (২৬ মার্চ, ২১৯৭১)। ২৭ মার্চ, ১৯৭১ সালে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন- মেজর জিয়াউর রহমান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস
মুজিবনগর সরকারের গঠন ও কার্যাবলি মুক্তিযুদ্ধকে গতিময় ও সুসংহত করা, ভারতে আশ্রয়গ্রহণকারী লক্ষ লক্ষ বাঙালির দেখাশোনা এবং বহির্বিশ্বে বাঙালি জাতির ভাবমূর্তিকে তুলে ধরার জন্য এ সময়ে ‘প্রবাসী সরকার’ (Government-in-Exile) গঠনের চিন্তাভাবনা চলতে থাকে। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল ঘোষিত হয় ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণার আদেশ।’ ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র আদেশ’ অনুযায়ী সেদিনই স্বাধীন ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হয় ।
এ সরকারের গঠন ছিল নিম্নরূপ :
ব্যক্তি | দায়িত্ব ও পদমর্যাদা |
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান | রাষ্ট্রপতি (পাকিস্তানের কারাগারে আটক) |
সৈয়দ নজরুল ইসলাম | উপ-রাষ্ট্রপতি (বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং পদাধিকারবলে সশস্ত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক) |
তাজউদ্দীন আহমেদ | প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষা, তথ্য ও বেতার, শিক্ষা, স্থানীয় প্রশাসন, স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ, শ্রম, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। |
খন্দকার মোশতাক আহমেদ | পররাষ্ট্র, আইন ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় । |
ক্যাপ্টেন (অব.) এম মনসুর আলী | অর্থ, জাতীয় রাজস্ব, বাণিজ্য, শিল্প ও পরিবহণ মন্ত্রণালয় । |
কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর ছিল তখন পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত এবং মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে। মেহেরপুরের ভবেরপাড়া গ্রামের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে বহু দেশি-বিদেশি সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা এবং আইনসভার সদস্যদের উপস্থিতিতে ১৯৭১ সালে ১৭ এপ্রিল স্বাধীন ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার’ (মুজিবনগর সরকার) শপথ গ্রহণ করে।
স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন আইসভার সদস্য ও প্রখ্যাত আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক মো. ইউসুফ আলী। মন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন অধ্যাপক মো. ইউসুফ আলী ও আব্দুল মান্নান। গার্ড অব অনার প্রদানকারী দলের নেতৃত্ব প্রদান করেন মাহবুব উদ্দিন আহমেদ।
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন মেজর আবু ওসমান চৌধুরী, এআর আজম চৌধুরী, মুস্তাফিজুর রহমান ও হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। এছাড়াও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম, আব্দুস সামাদ আজাদ, ডা. আসাবুল হক, নূরুল কাদের খান (CSP) ও তৌফিক ইলাহী চৌধুরী (CSP)।
মুজিবনগর সরকারের সর্বদলীয় উপদেষ্টা পরিষদ মুজিবনগর সরকারকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে উপদেশ প্রদান করার জন্য মুক্তিযুদ্ধে সমর্থনকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে ৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হয় (৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১)। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস
One comment
Pingback: Proyog Opoproyog-বাংলা ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ 2024 - Sopner BCS