ধ্বনি ও ধ্বনির পরিবর্তন
ধ্বনি ও ধ্বনির পরিবর্তন

ধ্বনি পরিবর্তন কত প্রকার।

ধ্বনি ও ধ্বনির পরিবর্তন নিয়ে লেখা এই নিবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে ধ্বনির সংজ্ঞা, ধ্বনি পরিবর্তন কত প্রকার, এবং ধ্বনির পরিবর্তনের প্রক্রিয়া ও এর ভাষাগত প্রভাব। এই নিবন্ধটি ভাষাতত্ত্বের শিক্ষার্থী ও আগ্রহীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রিসোর্স হিসেবে কাজ করবে।

ধ্বনির পরিবর্তন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

  • ব্যাকরণে শুধু মানুষের মুখনিঃসৃত অর্থবোধক আওয়াজকেই ধ্বনি বলে ।
  • ভাষার মূল উপাদান – ধ্বনি ।

ধ্বনি পরিবর্তন কত প্রকার

বাংলা ভাষার ধ্বনিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় । যথা :

  1. স্বরধ্বনি
  2. ব্যঞ্জনধ্বনি

মৌলিক স্বরধ্বনি

  • মৌলিক স্বরধ্বনি ৭টি । যথা : অ, আ, ই, উ, এ, অ্যা, ও ।

যৌগিক স্বরধ্বনি

  • পাশাপাশি অবস্থিত দুটি স্বরধ্বনি এক প্রয়াসে ও দ্রুত উচ্চারিত হয়ে যদি একটি যুক্ত ধ্বনিতে রূপ নেয়, তাকে যৌগিক স্বরধ্বনি বলে বাংলা ভাষায় যৌগিক স্বরধ্বনির সংখ্যা পঁচিশটি ।
  • বাংলা বর্ণমালায় যৌগিক স্বরজ্ঞাপক ধ্বনি ও বর্ণ দুটি । যথা : i. ঐ (অ + ই) ii. ঔ (অ + উ)
  • যৌগিক স্বরধ্বনিকে আরো যে নামে ডাকা হয়- দ্বিস্বর, সন্ধিস্বর, দ্বৈতস্বর, মিশ্র স্বরধ্বনি ও সংযুক্ত স্বরধ্বনি ।

পার্শ্বিক ধ্বনি
  • ‘ল’। জিহ্বার দু’পাশ দিয়ে বায়ু নিঃসৃত হয় বলে একে পার্শ্বিক ধ্বনি বলে । একে আবার তরল ধ্বনিও বলা হয় ।

তাড়নজাত ধ্বনি

  • ড়, ঢ় । জিহ্বার উল্টো পিঠের দ্বারা ওপরের দন্তমূলে দ্রুত আঘাত বা তাড়না করে উচ্চারিত হয় বলে এদেরকে তাড়নজাত ধ্বনি বলে ।

কম্পনজাত ধ্বনি

  • ‘র’। জিহ্বার অগ্রভাগকে কম্পিত করে এবং দন্তমূলকে একাধিকবার আঘাত করে উচ্চারিত হয় বলে একে কম্পনজাত ধ্বনি বলে ।

অর্ধ-স্বরধ্বনি

  • ই, উ, এ (য়) এবং ও । উদাহরণ: বই, ঘেউ, খায়, নাও ইত্যাদি ।

দীর্ঘস্বর

  • যেসব স্বরধ্বনি উচ্চারণে সময় বেশি লাগে তাকে দীর্ঘ স্বরধ্বনি বলে । দীর্ঘ স্বরধ্বনি ৭টি । যথা : আ, ঈ, উ, এ, ঐ, ও, ঔ ।

হ্রস্ব স্বর

  • যেসব স্বরধ্বনি উচ্চারণে সময় কম লাগে তাকে হ্রস্ব স্বরধ্বনি বলে। হ্রস্বস্বর ৪টি । যথা : অ, ই, উ, ঋ ।

উচ্চারণ স্থান অনুযায়ী ব্যঞ্জনধ্বনির বিভাগ

ব্যঞ্জনবর্ণসমূহউচ্চারণ স্থানউচ্চারণ স্থান অনুযায়ী নাম
ক, খ, গ, ঘ, ঙজিহ্বামূলকণ্ঠ্য বা জিহ্বামূলীয় বর্ণ
চ, ছ, জ, ঝ, ঞ, শ, য, য়অগ্রতালুতালব্য বর্ণ
ট, ঠ, ড, ঢ, ণ, ষ, র, ড়, ঢ়পশ্চাৎ দন্তমূলমূর্ধন্য বা পশ্চাৎ দন্তমূলীয় বর্ণ
ত, থ, দ, ধ, ন, ল, সঅগ্র দন্তমূলদন্ত্য বর্ণ
প, ফ, ব, ভ, মওষ্ঠওষ্ঠ্য বর্ণ
ধ্বনি পরিবর্তন

ব্যঞ্জনধ্বনির প্রকারভেদ

উচ্চারণ স্থানঅঘোষঘোষ
অল্প প্রাণমহাপ্রাণঅল্প প্রাণমহাপ্রাণনাসিক্য
কণ্ঠ
তালু
মূর্ধা
দন্ত
ওষ্ঠ
ধ্বনি পরিবর্তন

পরীক্ষায় আসার মতো আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

  • ক-ম পর্যন্ত ধ্বনিকে স্পর্শ ধ্বনি বলা হয় । স্পর্শ ধ্বনির সংখ্যা- ২৫টি।
  • বর্গের প্রথম ও দ্বিতীয় ধ্বনিকে বলে অঘোষ ধ্বনি । যেমন : ক + খ।
  • বর্গের তৃতীয় ও চতুর্থ ধ্বনিকে বলে ঘোষ ধ্বনি । যেমন : গ + ঘ । বর্গের ১ম + ৩য় + ৫ম ধ্বনি অর্থাৎ বিজোড় ধ্বনিকে অল্পপ্রাণ ধ্বনি বলে । যেমন : ক + গ + ঙ।
  • বর্গের ২য় + ৪র্থ ধ্বনি অর্থাৎ জোড় ধ্বনিকে মহাপ্রাণ ধ্বনি বলে । যেমন : খ + ঘ ।
  • উষ্ম ধ্বনি ৪টি । যথা : শ, ষ, স, হ ৷
  • উচ্চারণের সময় মুখবিবরে কোথাও বাধা না পেয়ে কেবল ঘর্ষণপ্রাপ্ত এবং শিশ ধ্বনির সৃষ্টি করে বলে এদেরকে উষ্মধ্বনি বলে। এ ধ্বনিগুলোকে আবার উষ্ম বর্ণও বলা হয় ।
  • • উষ্ম বর্ণের মধ্যে শ, ষ, স-কে শিষ ধ্বনি বলে এবং ‘হ’ হচ্ছে উষ্ম ঘোষধ্বনি ।
  • এক প্রয়াসে উচ্চারিত ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টিকে বলা হয় অক্ষর । যেমন : বন্ধন (বন্ + ধন্) শব্দে ২টি অক্ষর আছে ।

ধ্বনির পরিবর্তন

ধ্বনি পরিবর্তন এর সংজ্ঞা ও উদাহরণ

  • উচ্চারণের সময় সহজীকরণের প্রবণতায় শব্দের মূল ধ্বনির যেসব পরিবর্তন ঘটে, তাকে ধ্বনির পরিবর্তন বলে । ১৮৭০ সালে খ্যাতনামা ধ্বনিবিজ্ঞানীরা একমত হয়ে বলেন যে, ভাষায় ধ্বনির পরিবর্তন একটি স্বাভাবিক বা নিয়মিত ব্যাপার । যেমন : স্টেশন > ইস্টিশন, বাক্য > বাইক্য, মুলা > মুলো, শরীর > শরীল ।

ধ্বনি পরিবর্তনের কারণ

ধ্বনি পরিবর্তন কত প্রকার
ধ্বনি ও ধ্বনির পরিবর্তন-2
  • উচ্চারণে দ্রুততা ও সহজতা ।
  • উচ্চারণের অসাবধানতা ।
  • মুখগহ্বরের প্রত্যঙ্গ, আড়ষ্টতা বা হীনতা ।

ধ্বনি পরিবর্তন এর নিয়ম

ভাষা পরিবর্তন ধ্বনির পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পৃক্ত, ধ্বনির পরিবর্তন নানা প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয় । নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো :

স্বরাগম

উচ্চারণের সুবিধার জন্য বা অন্য কোনো কারণে শব্দের আদিতে, মধ্যে বা অন্ত্যে স্বরধ্বনি এলে, তাকে স্বরাগম বলে । যেমন : স্পর্ধা > আস্পর্ধা, ফিল্ম > ফিলিম ও ট্যাক্স > ট্যাকসো ইত্যাদি ।

বিভিন্ন প্রকার স্বরাগমের সংজ্ঞা ও উদাহরণ

নামসংজ্ঞাউদাহরণ
আদি স্বরাগমউচ্চারণের সুবিধার জন্য বা অন্য কোনো কারণে শব্দের আদিতে স্বরধ্বনি এলে তাকে আদি | স্বরাগম (Prothesis) বলে ।স্কুল > ইস্কুল, স্টেশন > ইস্টিশন, স্ত্রী > ইস্ত্রী, স্টেবল > আস্তাবল, স্পর্ধা > আস্পর্ধা ।  
মধ্য স্বরাগম, বিপ্রকর্ষ বা স্বরভক্তিসময় সময় উচ্চারণের সুবিধার ব্যঞ্জনধ্বনির জন্য সংযুক্ত মাঝখানে স্বরধ্বনি আসে একে বলা হয়, মধ্য স্বরাগম বা বিপ্রকর্ষ বা স্বরভক্তি ।অ: রত্ন > রতন, ধর্ম > ধরম, স্বপ্ন > স্বপন, হর্ষ > হরষ ইত্যাদি | ই: প্রীতি > পিরীতি, ক্লিপ > কিলিপ, ফিল্ম > ফিলিম ইত্যাদি । উঃ মুক্তা > মুকুতা, তুর্ক > তুরুক, ভ্রূ > ভুরু ইত্যাদি । এঃ গ্রাম > গেরাম, প্রেক > পেরেক, স্রেফ > সেরেফ ইত্যাদি । ও: শ্লোক > শোলোক, মুরগ > মুরোগ > মোরগ ইত্যাদি ।  
অন্ত্যস্বরাগমকোনো কোনো সময় শব্দের শেষে অতিরিক্ত স্বরধ্বনি আসে । এরূপ স্বরাগমকে বলা হয় অন্ত্যস্বরাগম ।দিশ্ > দিশা, পোখত্ > পোক্ত, বেঞ্চ > বেঞ্চি, সত্য > সত্যি ইত্যাদি ।  
ধ্বনি পরিবর্তন

স্বরসঙ্গতি (Vowel harmony)

একটি স্বরধ্বনির প্রভাবে শব্দে অপর স্বরের পরিবর্তন ঘটলে তাকে স্বরসঙ্গতি বলে । যেমন: দেশি > দিশি, বিলাতি > বিলিতি, মুলা > মুলো ইত্যাদি ।

বিভিন্ন প্রকার স্বরসঙ্গতির সংজ্ঞা ও উদাহরণ

নামসংজ্ঞাউদাহরণ
প্রগত (Progressive)আদিস্বর অনুযায়ী অন্ত্যস্বর পরিবর্তিত হলে প্রগত স্বরসঙ্গতি হয় মুলা > মুলো, শিকা > শিকে, তুলা > তুলো, ফিতা > ফিতে, বিলাত > বিলেত ইত্যাদি ।
পরাগত (Regressive)অন্ত্যস্বরের কারণে আদ্যস্বর পরিবর্তিত হলে স্বরসঙ্গতি হয় ।আখো > আখুয়া > এখো, দেশি > পরাগত | দিশি, বেটি > বিটি, সন্ন্যাসী > সন্নিসি, গেল > গ্যালো ইত্যাদি ।
মধ্যগত (Mutual)আদ্যস্বর ও অন্ত্যস্বর অনুযায়ী মধ্যস্বর পরিবর্তিত হলে মধ্যগত |বিলাতি > বিলিতি, ভিখারি > ভিখিরি, জিলাপি > জিলিপি ইত্যাদি ।
অন্যোন্য (Reciprocal)আদ্য ও অন্ত্য ও অন্ত্য (পূর্ববর্তী ও পরবর্তী) দুই স্বরই পরস্পরকে প্রভাবিত করে উভয়ই পরিবর্তিত হলে অন্যোন্য স্বরসঙ্গতি হয় ।মোজা > মুজো ইত্যাদি ।
চলতি বাংলায় স্বরসঙ্গতিচলিত বাংলায় কিছু স্বরসঙ্গতি পাওয়া যায় ।গিলা > গেলা, মিলামিশা > মেলামেশা, মিঠা > মিঠে, ইচ্ছা > ইচ্ছে ইত্যাদি। পূর্বস্বর উ-কার হলে পরবর্তী স্বর ও- কার হয় । যেমন : মুড়া > মুড়ো, চুলা > চুলো ইত্যাদি । বিশেষ নিয়মে : উড়ুনি > উড়নি, এখনি > এখুনি হয় ইত্যাদি ।
ধ্বনি পরিবর্তন

সম্প্রকর্ষ বা স্বরলোপ

উচ্চারণের জন্য শব্দের আদি, অন্ত্য বা মধ্যবর্তী কোনো স্বরধ্বনির লোপকে বলা হয়। সম্প্রকর্ষ বা স্বরলোপ। যেমন: বসতি > বসৃতি, জানালা > জান্‌লা ইত্যাদি ।

সমর্থক শব্দ জানতে ভিজিট করুন।

বিভিন্ন ধরনের সম্প্রকর্ষ বা স্বরলোপের সংজ্ঞা ও উদাহরণ

নামসংজ্ঞাউদাহরণ
আদিস্বরলোপ (Aphesis)ধ্বনিলোপের ক্ষেত্রে শব্দের প্রথমের স্বরধ্বনির লোপ হলে তাকে আদিস্বর লোপ বলে।অলাবু > পাবু > লাউ, উদ্ধার > উপার > ধার ইত্যাদি ।
মধ্যস্বর লোপ (Syncope)ধ্বনিলোপের ক্ষেত্রে শব্দের মধ্য স্বরধ্বনির লোপ হলে তাকে মধ্যস্বর লোপ বলে ।অগুরু >অগ্রু, সুবর্ণ স্বর্ণ ইত্যাদি ।
অন্ত্যস্বর লোপ (Apocope)ধ্বনিলোপের ক্ষেত্রে শব্দের শেষের স্বরধ্বনি উচ্চারণ থেকে বাদ গেলে তাকে অন্ত্যস্বর লোপ বলে ।আশা>আশ, আজি > আজ, চারি > চার, সন্ধ্যা > সঞঝা > সাঁঝ ইত্যাদি ।
র-কার লোপআধুনিক চলিত বাংলায় অনেক ক্ষেত্রে র-কার লোপ পায় এবং পরবর্তী ব্যঞ্জন দ্বিত্ব হয় ।তর্ক > তরু, করতে > কত্তে, মারল> মাল্ল, করলাম > কল্লাম ইত্যাদি ।
হ-কার লোপআধুনিক চলিত ভাষায় অনেক সময় দুই স্বরের মাঝামাঝি হ-কারের লোপ হয় ।পুরোহিত > পুরুত, গাহিল > গাইল, চাহে > চায়, সাধু > সাধু > সাউ, আরবি আল্লাহ > বাংলা আল্লা, ফারসি শাহ > বাংলা শা ইত্যাদি ।
ধ্বনি পরিবর্তন

সমীভবন (Assimilation )

শব্দমধ্যস্থ দুটি ভিন্ন ধ্বনি একে অপরের প্রভাবে অল্প-বিস্তর সমতা লাভ করে, এ ব্যাপারকে বলা হয় সমীভবন । যেমন: জন্ম > জম্ম, কাঁদনা > কান্না ইত্যাদি ।

বিভিন্ন ধরনের সমীভবনের সংজ্ঞা ও উদাহরণ

নামসংজ্ঞাউদাহরণ  
প্রগত (Progressive) সমীভবনপূর্বধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী ধ্বনির পরিবর্তন ঘটে । অর্থাৎ পরবর্তী ধ্বনি পূর্ববর্তী ধ্বনির মতো হয়, একে বলে প্রগত সমীভবন ।চক্র > চক, পদ > পক্‌ক, পদ্ম > পদ্দ, লগ্ন > লগগ ইত্যাদি ।
পরাগত (Regressive) সমীভবনপরবর্তী ধ্বনির প্রভাবে পূর্ববর্তী ধ্বনির পরিবর্তন হয়, একে বলে পরাগত সমীভবন।তৎ + জন্য > তজ্জন্য, তৎ + হিত তদ্ধিত, উৎ + মুখ > উন্মুখ ইত্যাদি ।
অন্যোন্য (Mutual) সমীভবনযখন পরস্পরের প্রভাবে দুটো ধ্বনিই পরিবর্তিত হয়, তখন তাকে বলে অন্যোন্য সমীভবন ।সংস্কৃত সত্য > প্রাকৃত সক্ষ। সংস্কৃত বিদ্যা > প্রাকৃত বিজ্জা ইত্যাদি।
ধ্বনি পরিবর্তন

অন্যান্য ধ্বনির পরিবর্তনের সংজ্ঞা ও উদাহরণ

ধ্বনি বিপর্যয়শব্দের মধ্যে দুটি ব্যঞ্জনের পরস্পর পরিবর্তন ঘতলে, তাকে ধ্বনি বিপর্যয় বলে ।যেমন: ইংরেজি বাকস বাংলা বাস্‌ক, জাপানি রিক্সা > বাংলা রিসকা ইত্যাদি । অনুরূপ – পিশাচ > পিচাশ, লাফ > ফাল, ডেস্ক > ডেক্স, তলোয়ার > তরোয়াল ইত্যাদি
অপিনিহিতি (Apenthesis)পরের ই-কার আগে উচ্চারিত হলে কিংবা যুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনির আগে ই-কার বা উ-কার উচ্চারিত হলে, তাকে অপিনিহিতি বলে ।আজি > আইজ, সাধু > সাউধ, রাখিয়া > রাইখ্যা, বাক্য > বাইক্য, সত্য > সইত্য, চারি > চাইর, মারি ১ মাইর ইত্যাদি ।
অসমীকরণ (Dissimilation)একই স্বরের পুনরাবৃত্তি দূর করার জন্য মাঝখানে যখন স্বরধ্বনি যুক্ত হয়, তখন তাকে অসমীকরণ বলে ।ধপ + ধপ > ধপাধপ, টপ + টপ > টপাটপ, পট + পট > পটাপট ইত্যাদি ।
বিষমীভবন (Dissimilation )দুটো সমবর্ণের একটির পরিবর্তনকে বিষমীভবন বলে ।শরীর > শরীল, লাল > নাল ইত্যাদি ।
দ্বিত্ব ব্যঞ্জন (Long Consonant) বা ব্যঞ্জনদ্বিত্বাকখনো কখনো জোর দেওয়ার জন্য শব্দের অন্তর্গত শব্দের ব্যঞ্জনের দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়, একে বলে দ্বিত্ব ব্যঞ্জন বা ব্যঞ্জনদ্বিত্বা ।পাকা > পাক্কা, সকাল > সক্কাল ইত্যাদি ।
ব্যঞ্জন বিকৃতিশব্দ- মধ্যে কোনো কোনো সময় কোনো ব্যঞ্জন পরিবর্তিত হয়ে নতুন ব্যঞ্জনধ্বনি ব্যবহৃত হয়, একে বলে ব্যঞ্জন বিকৃতি।কবাট > কপাট, ধোবা > ধোপা, ধাইমা > দাইমা ইত্যাদি
ব্যঞ্জনচ্যুতিপাশাপাশি সমউচ্চারণের দুটি ব্যঞ্জনধ্বনি থাকলে তার একটি লোপ পায় । এরূপ লোপকে বলা হয় ধ্বনিচ্যুতি বা ব্যঞ্জনচ্যুতি ।বউদিদি > বউদি, বড় দাদা > বড়দা, বড়চাচা > বড়চা ইত্যাদি ।
অন্তর্হতিপদের মধ্যে কোনো ব্যঞ্জনধ্বনি লোপ পেলে তাকে বলে অন্তর্হতি বা বর্ণলোপ |ফাল্গুন > ফাল্গুন, ফলাহার > ফলার, আলাহিদা > আলাদা ইত্যাদি ।  
অভিশ্রুতিবিপর্যস্ত স্বরধ্বনি পূর্ববর্তী স্বরধ্বনির সঙ্গে মিলে গেলে এবং তদনুসারে পরবর্তী স্বরধ্বনির পরিবর্তন ঘটলে তাকে বলে অভিশ্রুতি।করিয়া থেকে অপনিহিতির ফলে ‘কইরিয়া’ কিংবা বিপর্যয়ের ফলে ‘কইর’ থেকে অভিশ্রুতিজাত ‘করে’। এরুপ-শুনিয়া-শুনে, বলিয়া-বলে, হাটুয়া-হাউটা-হেটো, মাছুয়া-মেছো ইত্যাদি।
য়-শ্রুতি ও ব-শ্রুতিশব্দের মধ্যে পাশাপাশি দুটো স্বরধ্বনি থাকলে যদি এ দুটো স্বর মিলে একটি দ্বি স্বর না হয়, তবে এ স্বর দুটোর মধ্যে উচ্চারণের সুবিধার জন্য একটি ব্যঞ্জনধ্বনির মতো অন্তঃস্থ ‘য়’ বা অন্তঃস্থ ‘ব’ উচ্চারিত হয়। এই অপ্রধান ব্যঞ্জনধ্বনিটিকে বলা হয় য়- শ্রুতি বা ব- শ্রুতি।মা+আমার=মা য় আমার-মায়ামার। যা+আ=যা (ও) য়া= যাওয়া। এরুপঃ নাওয়া, খাওয়া,দেওয়া ইত্যাদি।
ধ্বনির পরিবর্তন

About Alauddin

I am a motivated and curious individual who thrives on learning and growth. With a passion for exploring diverse subjects, I am constantly seeking new knowledge and experiences. From delving into the intricacies of technology trends to delving into the pages of classic literature, I am an avid learner with a wide range of interests. I find joy in connecting with others, sharing insights, and collaborating on projects by Sopner BCS. My enthusiasm for personal development and helping others reach their potential drives me to engage in meaningful conversations and contribute positively to the world around me.

Check Also

বিপরীতার্থক শব্দ; সর্বশেষ সংশোধিত ২০২৩

কোনো শব্দের বিপরীত অর্থবোধক শব্দকে সে শব্দের বিপরীতার্থক শব্দ বলে। যেমন : আলো-আঁধার, উঁচু-নিচু । • তৎসম শব্দের বিপরীতার্থক তৎসম এবং তদ্ভব শব্দের বিপরীতার্থক তদ্ভব শব্দই হওয়া উচিত । বিপরীত শব্দ বিভিন্ন উপায়ে গঠিত হতে পারে । যেমন : ভিন্ন শব্দযোগে : উত্তম-অধম, আগা-গোড়া ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *