Definiton of Human Resource Management মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার সংজ্ঞা :-
সাধারণ অর্থে শিল্প কারখানায় ও অফিসে কর্মরত শ্রমিক কর্মীদের ব্যবস্থাপনাকে Human Resource Management বলে । অন্যভাবে বলা যায় ব্যবস্থাপনার যে অংশ দ্বারা প্রতিষ্ঠানের কর্মরত মানবীয় উপাদান সংক্রান্ত প্রশাসন পরিচালনা করা হয় তাই মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা নামে পরিচিত। পূর্বে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনাকে কর্মী ব্যবস্থাপনা (Personnel management), শ্রম ব্যবস্থাপনা (Labour management), কর্মী প্রশাসন (Personal adminstration), শিল্প ব্যবস্থাপনা (Industrial management) ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হত। মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যা কর্মী সংগ্রহ, প্রশিক্ষণ, মূল্যায়ন, ক্ষতিপূরণ এবং তাদের শ্রম সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা এবং ন্যায় নিষ্ঠার সাথে সম্পর্কিত ।
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার আওতা বা পরিধি :-
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা মৌলিক ব্যবস্থাপনার অংশ হলেও এর গুরুত্ব অফিসের অন্যান্য বিভাগের তুলনায় বেশ ব্যাপক । প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন কার্যাবলি সম্পাদনের যে সকল উপাদান ব্যবহৃত হয় সেগুলোর সমন্বয় পূর্বক মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা অফিসকে রাখে সর্বদা সচল ও গতিশীল। শিল্প সম্পর্ক উন্নয়ন, পারিতোষিক ও মজুরী নির্ধারণ সর্বপরি তাদের উন্নয়ন ও সংরক্ষণ করা মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার প্রধান দায়িত্ব। তাই বলা যায় প্রতিষ্ঠানের কর্মরত সকল স্তরের কর্মী সংক্রান্ত নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার কাজ বলে এর আওতা বা পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক । নিম্নে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার আওতাভুক্ত বিষয়সমূহ উপস্থাপন করা হলো :-
১. মানব সম্পদ পরিকল্পনা (Human Resource Planning) :-Human Resource Management
মানব সম্পদ পরিকল্পনার মৌলিক উদ্দেশ্য হলো প্রতিষ্ঠানের কাজের প্রকৃতি ও ধরন অনুযায়ী কার্য বিভক্তি করে যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মীদের মধ্যে কার্য বণ্টন করা। সময়মত সঠিক ব্যক্তিকে সঠিক দায়িত্বে নিয়োজিত করার জন্য বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে সে অনুযায়ী বিভিন্ন মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হয় ।
২. সংগঠন ও পদের নকশা প্রণয়ন (Design of organization & job) :- Human Resource Management
প্রতিষ্ঠানের সামগ্রীক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ। তাই কার্যকর সংগঠন কাঠামো নির্ধারণ, কার্যভিত্তিক পদ সৃষ্টি ও বিন্যাস, পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণ, দায়িত্ব ও কর্তব্য প্রদর্শন করা মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার অন্তর্ভূক্ত । এজন্য পদ অনুযায়ী মানব সম্পদের চাহিদা নির্ধারণ ও উৎস নির্বাচন করে পদ ভিত্তিক কর্মী নিয়োগ করতে হয়।
৩. কার্য বর্ণনা (Description of work) :- Human Resource Management
সংগঠনের জন্য প্রণীত নকশায় পদ ভিত্তিক বন্টনকৃত কার্যের বর্ণনা মনব সম্পদ ব্যবস্থাপনার অন্তর্ভূক্ত। এতে বিভিন্ন পদের বিপরীতে কার্যের সীমানা নির্ধারণ করা হয় এবং কাজের সামগ্রীক বর্ণনা সহজতর হয়।
৪. নির্বাচন ও স্টাফিং (Selections & staffing) :- Human Resource Management
প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে প্রয়োজনীয় দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মী খুঁজে বের করা হয় এবং তাদের কাজের জন্য নির্বাচন করে উপযুক্ত ব্যক্তিকে সঠিক স্থানে পদায়ন করা হয়। এ পর্যায়ে কর্তৃপক্ষ কর্মীর প্রয়োজন সনাক্তকরণ, কর্মী সংগ্রহের উৎস নির্বাচন, পদোন্নতি, বদলি ইত্যাদি কার্য সম্পাদন করেন।
৫. প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন (Training & Development) :- Human Resource Management
কর্মীকে তার কার্য পরিবেশ, পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও কাজ সম্পর্কে হাতে কলমে শিক্ষা দেয়াকে প্রশিক্ষণ বলে। অন্যদিকে কর্মরত কর্মীকে অধিক দক্ষ করে গড়ে তোলার কাজকে উন্নয়ন বলে । প্রশিক্ষণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে কর্মীকে কাজের জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তোলা যায় ।
৬. সাংগঠনিক উন্নয়ন (Organizational Development) :- Human Resource Management
প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীদের সন্তুষ্টির জন্য সঠিক ভাবে কার্য মূল্যায়ন ও পদ মূল্যায়ন করে সংগঠনের সকল স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মীর মধ্যে আন্তঃব্যক্তিক ও আন্তঃদলীয় সম্পর্ক উন্নয়নের ব্যবস্থা করা হয়।
৭. মজুরী ও বেতন (Wages & Salaries) :- Human Resource Management
মানুষ তার অভাব পূরণের জন্য অর্থের বিনিময়ে শ্রম বিক্রি করে। শ্রমিকদের দক্ষতা ও যোগ্যতা অনুযায়ী মজুরী ও বেতন কাঠামো নির্ধারণ করতে হয়। মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কর্মীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুবিধাসহ স্থায়ী মজুরী ও বেতনের ব্যবস্থা করে থাকে ।
৮. কর্ম পরিবেশ (Working Environment) :- Human Resource Management
প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের জন্য কার্য পরিবেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রতিষ্ঠানের কার্য সময়, কাজের ভৌত পরিবেশ, নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়সমূহ উন্নত ও সম্প্রসারিত হলে কর্মীকে সহজে কাজের প্রতি আকর্ষিত করা যায়। তাই এগুলো মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার আওতাভুক্ত।
৯. শ্রমিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক (Labour Management Relations) :- Human Resource Management
শিল্প প্রতিষ্ঠানে শান্তি, শৃঙ্খলা, সেবা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি সর্বোপরি প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন সুন্দর শ্রম ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভরশীল। সুষ্ঠুশ্রম ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক সৃষ্টির কাজটি মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার আওতাভুক্ত বিষয় ।
১০. বিনোদন সুবিধা (Entertainment Benefit) :- Human Resource Management
বিনোদন ব্যবস্থার মাধ্যমে শ্রমিক কর্মীকে সতেজ ও উদ্যোমী রাখা যায়। তাই কর্মীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের বিনোদনমূলক ব্যবস্থা যেমন- খেলাধুলা, চিত্তবিনোদন, বনভোজন, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ইত্যাদির ব্যবস্থা করা মানব সম্পদ উন্নয়ন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ কাজ ।
১১. ব্যক্তিক গবেষণা ও তথ্য ব্যবস্থাপনা (Personal Resource & Information System) :-
প্রযুক্তির উন্নয়নে আজ পৃথিবী পরিবর্তীত হচ্ছে অহরহ। তাই পরিবর্তীত অবস্থার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে তথা প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থেকে নিজেদের উন্নয়নের জন্য ব্যক্তিক গবেষণা ও তথ্য ব্যবস্থপনা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। কর্মীর প্রত্যাশা ও আচরণ অনুধাবন করে তাদের দ্বারা প্রত্যাশা মাফিক কাজ আদায় করতে মানব সম্পদ উন্নয়নে গবেষণা ও তথ্য ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা অত্যধিক।
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যসমূহ (Objective of Human Resource Management) :-
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার মৌলিক উদ্দেশ্য হলো প্রতিষ্ঠানের বস্তুগত সম্পদ ও কর্মরত মানবীয় সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার করে সামগ্রীক কাড়িখত লক্ষ্য অর্জন করা। মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের জন্য দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মী সংগ্রহ করে দক্ষতা অনুযায়ী তাদের কাজে নিয়োগ দিয়ে থাকে। অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ কর্মীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে থাকে। ফলে অতি সহজেই তাদের দ্বারা কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হয়। মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা সামগ্রীক ভাবে যে সব উদ্দেশ্য অর্জনে তৎপর থাকে সেগুলো নিম্নরূপ ঃ
১. দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা (To make skilled manpower) :- Human Resource Management
দক্ষ জনশক্তি প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের জন্য মূল্যবান সম্পদ। যে প্রতিষ্ঠানের কর্মী বাহিনী যত দক্ষ তাদের সামগ্রীক কার্যক্রম তত উন্নত। তাই মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্য হলো প্রতিষ্ঠানের দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা। প্রতিষ্ঠানের সামগ্রীক অবস্থার সাথে সমন্বয় করে কর্মরত কর্মীদের দক্ষ করে গড়ে তোলা ।
২. সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার (To ensure maximum Utilizations of the Assets) :-
মনুষ্য সম্পদ ছাড়াও দৈনন্দিন কার্যাবলি সম্পাদনে বিভিন্ন ধরনের বস্তুগত সম্পদ ব্যবহৃত হয়। উৎপাদন ও সেবা পরিবেশনে ব্যবহৃত সব উপকরণের সর্বোত্তম কাম্য ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে যেমন উৎপাদন বাড়ে তেমনি সেবার মানও হয় উন্নত। মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের বস্তুগত সহ সকল উপকরণের ব্যবহার নিশ্চিত করে ।
৩. উপযুক্ত কর্মী নিয়োগ (To appoint appropriate Person) :- Human Resource Management
সঠিক পদের জন্য উপযুক্ত কর্মী খুঁজে বের করে কাজে নিয়োগ দেয়া মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগে ভিন্ন ভিন্ন কাজ হয়। সকল কাজের ধরণ ও গুরুত্ব এক নয়। কাজেই কাজের ধরণ ও গুরুত্ব ভেদে আলাদা আলাদা কর্মী নিয়োগ করতে হয়। এতে করে সকল অপচয় রোধ করে মান সম্মত পণ্য অধিক পরিমাণে উৎপাদন করা যায় ৷
৪. প্রশিক্ষণ (Training) :- Human Resource Management
প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মী সংগ্রহ ও নির্বাচন করে তাদের কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি কল্পে প্রশিক্ষণ দিতে হয়। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীর কাজ সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান অর্জন করতে পারে। কাজেই প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তোলা মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার আর একটি উদ্দেশ্য।
৫. প্রেষণা দান (To give incentives ) :-
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা যেহেতু সরাসরি কর্মীদের নিয়ে কাজ করে সেহেতু কর্মরত কর্মীদের আচরণ ও মনোভাব ভালভাবে অনুধাবন করে বিভিন্ন ধরনের প্রেষণা দানের ব্যবস্থা করে থাকে। সঠিক প্রেষণা দিতে পারলে কর্মী স্বেচ্ছায় কাজে আত্ম নিয়োগ করে ফলে কাজের মান ও গতি বাড়ে ৷Human Resource Management
৬. কার্য বিশ্লেষণ (Job analysis) :- Human Resource Management
একটি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের কার্যাবলি সম্পাদন হয়ে থাকে। কাজের ধরণ, প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কার্য বিভাজন করে কর্মীকে তার পছন্দ অনুযায়ী কাজে নিয়োগ দান এবং সে অনুযায়ী পারিতোষিকের ব্যবস্থা করা ।
৭. কর্ম সম্পাদন মূল্যায়ন (Performance evaluation) :-
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো কার্য মূল্যায়ন করা। কর্মীর কর্ম সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে সে অনুযায়ী মজুরী কাঠামো নির্ধারণ করলে কর্মী কাজের প্রতি অধিক যত্নশীল হয়। ফলে প্রতিষ্ঠানের প্রভুত উন্নতি সাধিত হয়ে থাকে ।
৮. মানবীয় সম্পর্ক উন্নয়ন (Development of Human relations) :- Human Resource Management
একটি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ধরনের কাজ হয়ে থাকে। এসমস্ত কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য কর্মীও থাকে ভিন্ন ভিন্ন। কাজেই কর্মরত সকল কর্মীদের মধ্যে উন্নত সম্পর্ক যাতে বজায় থাকে সেজন্য মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে ।
৯. উত্তম কার্য পরিবেশ (Good working condition) :- Human Resource Management
প্রতিষ্ঠানে সামগ্রীক কার্য পরিবেশ বিভিন্ন ধরনের বস্তুগত ও অবস্থাগত উপাদান ও উকরণের সমন্বয়ে গঠিত হয়। কাজেই এসকল মানবীয় এবং বস্তুগত সকল উপকরণের মধ্যে সুষম সমন্বয়পূর্বক একটি সুন্দর কার্য পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য সচেষ্ট থাকে ।
১০. উৎপাদন বৃদ্ধি (To increase production) :- Human Resource Management
উৎপাদন বৃদ্ধি করা ব্যবস্থাপনার একটি অন্যতম উদ্দেশ্য। সঠিক ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে কর্মীদের নির্দেশনা প্রদান ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কর্মীদের কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি করা যায় ।
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার কার্যাবলি (Functions of Human Resource Management) :-
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার অন্যতম প্রধান কাজ হলো প্রতিষ্ঠানের জন্য দক্ষ ও প্রয়োজনীয় জনশক্তি তৈরি করা। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য যোগ্য ও দক্ষ কর্মী সংগ্রহ করা, প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কর্মীদের দক্ষতার উন্নতি করা এবং উপযুক্ত পারিতোষিকের মাধ্যমে তাদেরকে ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হয়। প্রতিষ্ঠানের সামগ্রীক অবস্থা ভেদে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার কাজে ভিন্নতা থাকলেও প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানকে এসব কার্যাবলি কমবেশি সম্পাদন করতে হয়। যেহেতু ব্যবস্থাপনার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো মানবীয় উপাদান। তাই এ মানবীয় উপাদানকে ঘিরে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার কাজকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। নিম্নের চিত্রে দেখানো হলো :
ক) স্টাফিং (Staffing) :- Human Resource Management
যে পদ্ধতি বা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদ পূরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তাকে স্টাফিং বলে। প্রতিষ্ঠানের কর্মীর প্রয়োজনীয়তা চিহ্নিত করে কর্মী সংগ্রহ, নির্বাচন ও স্থাপনের মাধ্যমে শূন্যপদ পূরণই হলো স্টাফিং। এর আওতাভুক্ত কাজগুলো নিম্নরূপ –
১. কার্য বিশ্লেষণ (Job analysis) :- Human Resource Management
যে প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠানের একটি নির্দিষ্ট পদ বা কার্যের বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানা যায় তাকে কার্য বিশ্লেষণ বলে। কার্য বিশ্লেষনের মাধ্যমে কর্মী সংগ্রহ ও নির্বাচন, কর্মীর দক্ষতা, যোগ্যতা ও গুণাবলি ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায়। ফলে সঠিক মজুরি কাঠামো নির্ধারণ সহজ হয়।
২. মানব সম্পদ পরিকল্পনা (Human resource planning) :- Human Resource Management
যে প্রক্রিয়া বা পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সামগ্রীক পরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়নেরর জন্য জনশক্তির চাহিদা নিরূপণ ও চাহিদা পূরণের যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তাকে মানব সম্পদ পরিকল্পনা বলে । এর মাধ্যমে সংগঠন কর্মী সংক্রান্ত যাবতীয় পূর্ব ধারণা পেয়ে থাকে, ফলে নির্দিষ্ট সময়ে উপযুক্ত কর্মী পেতে অসুবিধা হয় না ।
৩. কর্মী সংগ্রহ ও নির্বাচন (Recruitment & Selection) :- Human Resource Management
যে পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের শূন্যপদ পূরণের জন্য চাকুরি প্রার্থীদের কাজের প্রতি প্রলুব্ধ করা হয় তাকে কর্মী সংগ্রহ বলে। অন্যদিকে পরীক্ষা নিরীক্ষা ও যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে অধিক যোগ্যদের কার্যে নিয়োগ দেয়াকে কর্মী নির্বাচন বলে ।
৪. নির্দেশনা ও স্থাপনা (Guidence & Placement) :- Human Resource Management
কর্মী নিয়োগের পর তাদের সঠিক স্থানে স্থাপন করে কার্য শুরুর নির্দেশ দিতে হয়। এক্ষেত্রে কর্মীদের যোগ্যতা, কাজের প্রতি ঝোঁক, আগ্রহ প্রবণতা ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে উপযুক্ত কর্মীকে উপযুক্ত স্থানে স্থাপন করা যায় ৷
খ) প্রশিক্ষণ, উন্নয়ন ও ব্যবহার (Training, Development & Utilization) :-
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো প্রশিক্ষণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে কর্মীদের ব্যবহার উপযোগী করে গড়ে তোলা । এ পর্যায়ে কাজগুলো নিম্নরূপ :-
১. কর্মী পরিচিতি ও সামাজিকীকরণ (Induction & Socialization) :-
নতুন নিয়োগকৃত কর্মী প্রতিষ্ঠানের সামগ্রীক পরিবেশ সম্পর্কে অপরিচিত থাকে। তাই কর্মীদের প্রতিষ্ঠানের নতুন পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ, রীতি-নীতি, উদ্দেশ্য ও কার্যাবলির সাথে পরিচিত ও অভিযোজনের কাজ করতে হয়।
২. প্রশিক্ষণ (Training) :- Human Resource Management
যে প্রক্রিয়া বা পদ্ধতির মাধ্যমে কর্মীদের কর্ম দক্ষতা বধদ্ধি, আচর- আচরণ উন্নত ও কাজ সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান দেওয়া হয় তাকে প্রশিক্ষণ বলে । প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মী যে কোন পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নিজেকে গড়ে তুলতে পারে।
৩. উন্নয়ন (Development) :- Human Resource Management
উন্নয়ন হলো একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে সংগঠনে কর্মরত সকল নির্বাহী ও কর্মীদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি করা হয়। বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে তাদের কর্মদক্ষতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতা, আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতা ইত্যাদি সুদূর প্রসারিত করার চেষ্টা করা হয়।
৪. কর্মীদের সুবিধাদি (Employee Benefits) :- Human Resource Management
জীবন যাপনের জন্য আর্থিক সুবিধা ছাড়াও অন্যান্য কিছু সুযোগ সুবিধার প্রয়োজন হয়। যেমন- উৎসব ভাতা, বোনাস, চিকিৎসা, অবসর ভাতা, প্রভিডেন্ট ফান্ড, বিনোদন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এ ধরনের বিবিধ সুবিধাদি কর্মীদের কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়ায় ৷
৫. কর্মী প্রতিশ্রুতি (Employee Commitment) :- Human Resource Management
কর্মীকে চাহিদা মাফিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করলে এবং প্রতিষ্ঠানের সামগ্রীক নীতিমালা সুষ্ঠু ও সুন্দর হলে কর্মীগণ সামগ্রীকভাবে প্রতিষ্ঠানের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। এতে কর্মী ও প্রতিষ্ঠান উভয় লাভবান হয়।
ঘ) সংরক্ষণ (Maintenance) :- Human Resource Management
প্রতিষ্ঠানের সামর্থ্য অনুযায়ী কর্মীদের উপযুক্ত সুযোগ সুবিধা প্রদান করে তাদের সংরক্ষণের মাধ্যমে ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হয়। এ জন্য মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা যে কাজ গুলো করে সেগুলো হলো-
১. নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য এবং নিরাপদ কর্ম পরিবেশ (Safety & Health) :-
প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সকল নির্বাহী ও কর্মীদের জন্য নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে যন্ত্রপাতি নিয়ম মাফিক স্থাপন করে অফিসকে ভালভাবে বিন্যাস করতে হয়। অফিসের অভ্যন্তরে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় রাখা। যথা সম্ভব নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, ঝুঁকি হ্রাস, দূর্ঘটনা প্রতিরোধ এবং ডাক্তার ও ঔষোধের ব্যবস্থা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। Basic But Easy Rocket Science 2023
২. যোগাযোগ (Communication) :-
কার্যকর যোগাযোগের মাধ্যমে যেমন আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক উন্নয়ন হয় একই ভাবে অকার্যকর যোগাযোগের মাধ্যমে আবার আন্তঃদলীয় সমস্যা সৃষ্টি হয়। তাই সঠিক ও সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থা সৃষ্টি করে সর্বক্ষেত্রে সুসম্পর্ক সৃষ্টি করতে হয়।
৩. শ্রম এবং শ্রম আইন ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক (Labour management Relation) :-
প্রতিষ্ঠানের শ্রম ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক উন্নত হলে উৎপাদন বাড়ে ও সেবার মানও উন্নত হয়। শ্রম ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক ভাল রাখলে কর্মী মনোভাব, অনুধাবন করে তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী যুক্তিসংগত প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হয়।
৪. কাউন্সিলিং (Counselling) :-
শ্রমিক কর্মীরা রক্ত মাংসের তৈরি মানুষ। তাদের শরীরের পাশাপাশি মন নামক একটি উপাদান আছে- যা দ্বারা সে অনেক কিছু ভাবে। তাই শারীরিক সুস্থ্যতার পাশাপাশি মানসিক সুস্থ্যতাও অত্যন্ত জরুরী। কাউন্সিলিং ব্যবস্থার মাধ্যমে কর্মীদের আবেগজনিত সমস্যার সমাধান করে কার্য সম্পাদনে উদ্বুদ্ধ করা যায় ।
৫. শৃঙ্খলা এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা (Descipline) :-
শৃঙ্খলা বিষয়টি ছোট বড় প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানেই গুরুত্বের দাবীদার। প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি ক্ষেত্রে শৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করে তা বজায় রাখতে হয়। বাস্তবক্ষেত্রে যে প্রতিষ্ঠান যত শৃঙ্খলিত সে প্রতিষ্ঠান তত উন্নত ।
৬. ব্যক্তিগত নথিপত্র সংরক্ষণ-
প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সকল নির্বাহী ও কর্মীদের নিয়োগ, পরিচালনা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগত নথিপত্র সংরক্ষণ করা।
ঙ) মনিটরিং (Monitoring) :-
মনিটরিং এমন একটি ব্যবস্থা যার মাধ্যমে কর্মীদের প্রয়োজনে উপদেশ দেয়া হয় এবং বিশেষ ক্ষেত্রে সতর্ক করা হয়। মনিটরিং ব্যবস্থা মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার সর্বশেষ স্তরের কাজ। এ ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপক-
১. সম্পাদিত কাজের ধরন পরীক্ষা করেন।
২. প্রয়োজনে কার্য সম্পর্কে মতামত প্রদান করেন, এবং
৩. মতামতের উপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন ৷
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব (Importance of Human Resource Management) :-
প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান সময় অব্দি সকল ধরনের প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলি সম্পাদনে যে সকল বস্তুগত ও অবস্তুগত উপাদান ও উপকরণ ব্যবহৃত হয়ে আসছে শ্রমিক কর্মী তাদের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান কালে নতুন ধরনের যন্ত্রপাতি ও কলাকৌশল আবিষ্কারের ফলে শ্রমিক কর্মীদের গুরুত্ব মোটেও কম নয়। এর প্রধান কারণ হলো কর্মী উৎপাদনের একমাত্র উপাদান যা অন্যান্য উপকরণগুলো সমন্বয় করে সুষ্ঠুভাবে কাজ সুসম্পন্ন করে। উপাদানের অন্যান্য উপকরণ যত ভালই হোক না কেন কর্মী ভিন্ন তাদের কোন কার্যকরী মূল্য নাই। বর্তমানে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের আয়তন ও জটিলতা বৃদ্ধির সাথে সাথে জনশক্তির সার্থক ব্যবহারের বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিয়েছে। মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা তার বিশেষায়িত জ্ঞান, কর্ম নৈপুন্য ও বিভাগীয় রীতিনীতির সুষ্ঠু প্রয়োগের মাধ্যমে মানবীয় উপাদানের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে উৎপাদন বৃদ্ধি ও সেবার মান উন্নয়নের চেষ্টা চালায়। আর এ জন্যই মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা সকল নির্বাহীদের প্রধান কাজ। প্রতিষ্ঠানের সামগ্রীক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের গুরুত্ব অত্যন্ত ব্যাপক। নিম্নে এর গুরুত্ব সমূহ ব্যাখ্যা করা হলো :-
১. মানব সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার (Maximum Utilization of Human Resources) :-
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার প্রধান কাজ হলো বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীদের যথাযথভাবে কাজে লাগানো। জনশক্তি পরিকল্পনার মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানের কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য কর্মীদের সক্রিয় করে তোলে। কারণ উৎপাদনের সকল বস্তুগত ও অবস্তুগত উপাদানগুলো নিষ্ক্রিয় থাকে। মানবীয় উপাদান বা শ্রমিক কর্মীদের ছোঁয়াতেই সেগুলো সক্রিয় হয়ে উঠে বলে এক্ষেত্রে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের গুরত্ব অত্যন্ত ব্যাপক ।
২. বস্তুগত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার (Maximum Utilization of Material resources) :-
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত মানবীয় উপাদান ছাড়াও অন্যান্য বস্তুগত সম্পদ ও উপকরণ সমূহের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র, কাঁচামাল সহ ব্যবহৃত সকল উপকরণ সমূহের সঠিক ব্যবহার করতে না পারলে প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হবে। সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে বস্তুগত উপাদানসমূহের কাম্য ব্যবহার করে উৎপাদন বৃদ্ধি ও সেবার মান উন্নত করা যায়।
৩. কর্মীদের কর্ম দক্ষতা উন্নয়ন (Developing the working skill of works) –
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কর্মরত কর্মীদের কর্মদক্ষতা উন্নয়নের জন্য পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পেলে প্রতিষ্ঠানের সেবার মান যেমন বাড়ে তেমনি উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়। ফলে প্রতিষ্ঠান সর্বাঙ্গীন ভাবে লাভবান হয়।
৪. ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ (Preparing future development plan) :-
বর্তমান যুগকে যান্ত্রিক যুগ বলা হয়। প্রযুক্তির উন্নয়ন ও বিকাশের ফলে আমাদের চারপাশ দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা পরিবর্তীত অবস্থার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে প্রতিষ্ঠানের জন্য বিভিন্ন মেয়াদী ভবিষ্যৎ প্রকৃতির উন্নয়ন ও পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে।
৫. উপযুক্ত কর্মী সংগ্রহ (Recruting the proper Personnel) :-
সামগ্রীক ব্যবস্থাপনা থেকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে পৃথক করার মূল কারণই হলো প্রতিষ্ঠানের জন্য উপযুক্ত কর্মী সংগ্রহ করা। উপযুক্ত কর্মী সংগ্রহ ও নির্বাচনের জন্য মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে।
৬. সমন্বয় করা (Io Co-ordinate) :-
প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগের সাথে প্রতিষ্ঠানের এবং কর্মরত সকল স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে এবং বস্তুগত ও অবস্তুগত উপকরণসমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা মানব সম্পদ ব্যবস্থার অন্যতম কাজ।
৭. কার্য সন্তুষ্টি (Job Satisfaction) :-
প্রতিষ্ঠানের সামগ্রীক কার্য পরিবেশ উন্নত করতে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। এজন্য কর্মীদের মধ্যে কর্মসন্তুষ্টি বজায় থাকে ফলে শ্রম ঘূর্ণায়মানতা হ্রাস পায়।
৮. শ্রম ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক উন্নয়ন (Developing the labour management Relation) :-
প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য শ্রম ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক উন্নয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ পূর্বশর্ত। ব্যবস্থাপনার সাথে শ্রমিকদের সম্পর্ক অনুকূল হলে অতি সহজে শ্রমিকদের দ্বারা উদ্দেশ্য হাসিল করা যায়।
৯. উচ্চ মনোবল সৃষ্টি (Maintaining the high morale) :-
শ্রমিক কর্মীদের মনোবল উন্নয়ন ও অক্ষুণ্ণ রাখা মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার অন্যতম প্রধান কাজ। এ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমূলক পদক্ষেপ নিতে হয়।
১০. মজুরী নীতি প্রণয়ন (Preparing the wages policy) :-
কর্মীদের জন্য একটি মজুরি নীতি প্রণয়ন করা ও মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ কাজ। প্রত্যাশা অনুযায়ী কর্মীদের মজুরী প্রদান করলে কর্মীরা সন্তোষ্ট থাকে। ফলে শ্রম ঘূর্ণায়মানতা কমে যায়। তাই সঠিক মজুরী নির্ধারণ ও প্রদানের ব্যবস্থা করে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা এই উদ্দেশ্যকে কার্যকরি করে।
১১. কল্যাণমূলক কার্যক্রম (Welfare activities) :-
কর্মীই হলো প্রতিষ্ঠানের প্রাণ শক্তি। কর্মী প্রতিষ্ঠানের সকল বস্তুগত ও অবস্তুগত উপকরণসমূহের পূর্ণ ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানকে রাখে সচল ও গতিশীল। তাই কর্মীদের সার্বিক ভালমন্দ দেখা শুনার ভার মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার উপর ন্যাস্ত থাকে। মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কর্মীদের অভাব অভিযোগ দূর করতে তাদের সন্তুষ্টির জন্য কল্যাণমূলক নানাবিধ কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে।
১২. প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উন্নয়ন (Development of the organization)-
প্রতিষ্ঠানের সামগ্রীক কাজের জন্য মৌলিক ব্যবস্থাপনা যে সকল রীতি-নীতি ও নির্দেশাবলি জারি করে মানব সম্পদ বা কর্মী ব্যবস্থাপনা সেগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করে। এজন্য কর্মীদের সঠিকভাবে পরিচালনা ও নির্দেশনা দিয়ে তাদের নিকট থেকে সর্বাধিক উৎপাদন ও সেবা আদায় করে। ফলে প্রতিষ্ঠানের আয় বাড়ে ও সুনাম বৃদ্ধি পায়।
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও কর্মী ব্যবস্থাপনার পার্থক্য (Difference Between HRM & PM) :-
ইংল্যান্ডের কৃষি বিপ্লব ও শিল্প বিপ্লবের পর সমগ্র পৃথিবীতে অফিস আদালত ও শিল্প কারখানায় ব্যাপক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। কাজের কলেবর ও জটিলতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে শিল্প কারখানার কাজের বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যতা রেখে মৌলিক ব্যবস্থাপনা বিষয়েও আধুনিক ধ্যান ধারনা সংযোজন করা হয়। সে সময় মৌলিক ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হিসেবে কর্মী ব্যবস্থাপনা নামক যে নতুন বিষয়ের উদ্ভব হয় বিংশ শতাব্দীতে এসে আধুনিক মতবাদ হিসেবে তার নতুন নামকরণ হয়েছে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা। শুধু নামকরণই নয় কাজের ৎ প্রকৃতির দিক থেকেও উভয়ের মধ্যে কিছু পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় যা নিম্নরূপ ঃ-
১. কর্মী ব্যবস্থাপনা মৌলিক ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে সংযোজন হয়ে উনবিংশ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত পরিচিতি লাভ করে। একে অনেকটা মধ্যযুগীয় মতবাদ হিসেবে বলা যায়। অন্যদিকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কর্মী ব্যবস্থাপনার আধুনিক মতবাদ হিসেবে বিংশ শতাব্দী থেকে আত্মপ্রকাশ ঘটে ।
২. কর্মী ব্যবস্থাপনা সংকীর্ণ অর্থে ব্যবহৃত হয় । অন্যদিকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয় ।
৩. কর্মী ব্যবস্থাপনা কর্মীদের কল্যাণকল্পে মধ্যস্থতাকারী ও সমাধানকারী হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নয় বরং নির্বাহী হিসেবে জনশক্তির সঠিক পরিকল্পনা, নির্দেশনা ও নিয়ন্ত্রণের উপর গুরুত্ব প্রদান করে ৷
৪. কর্মী ব্যবস্থাপনা অস্তিত্ব টিকে রাখার জন্য সাংগঠনিক দক্ষতার সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংগঠনের মূল শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠানে জনশক্তির প্রয়োজনীয়তার প্রতি গুরুত্বারোপ
করে।
৫. কর্মী ব্যবস্থপনা কর্মীদের উৎপাদনের একটি উপকরণ হিসেবে বিবেচনা করে। অন্যদিকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনায় কর্মরত কর্মীদের সম্পদ ও সামাজিক পুঁজি হিসেবে বিবেচনা করে ।
৬. কর্মী ব্যবস্থাপনা পারস্পরিক সম্পর্ক নির্দেশিত বিষয়। অন্যদিকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন লক্ষ্য নির্দেশিত ।
৭. কর্মী ব্যবস্থাপনা কর্মীদের আনুগত্যশীল রেখে তাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করে। অন্যদিকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কর্মীদের ক্ষমতায়ন ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধতার প্রতি গুরুত্বারোপ করে। আসলে ব্যবহারিক বা সাধারণ অর্থে কর্মী বলতে যারা সংগঠনের সর্বনিম্নস্তরে অবস্থান করে কাজ করে তাদেরকে বুঝায় আর মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনায় সংগঠনের শীর্ষ স্তরীয় নির্বাহী থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন স্তরের নিয়োজিত শ্রমিক কর্মীকে বুঝায় যারা সংগঠনের উদ্দেশ্য অর্জনে একত্রে লিপ্ত থেকে কাজ করে ।
মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের কাজ ঃ-
মানবসম্পদ বিভাগকে কোম্পানীর প্রাণ বলা হয়। একটি প্রতিষ্ঠানের প্রাণ ও প্রধান চালিকা শক্তি হল কর্মী আর এই কর্মী ব্যবস্থাপনার কাজ করে থাকে মানব সম্পদ। মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান কাজ হলো-
১। কৌশলগত ব্যবস্থাপনামূলক কাজ ।
২। নিরাপদ কর্মপরিবেশ
৩। নতুন কর্মী নিয়োগ ।
৪। কর্মী ও মালিকের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন।
৫। বেতন ও মজুরী সংক্রান্ত কাজ ।
৬ । বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানিক সুবিধা নিয়ে কাজ করা ।
৭ । শ্রম আইন সম্পর্কিত তথ্য প্রদান ও ব্যবস্থাপনা ।
৮। কর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদেরকে দক্ষ করে গড়ে তোলা ।
৯ । হিউমান রিসোর্স ইনফরমেশন সিস্টেম ব্যবস্থাপনা ।
১০। কর্মচারীদের মূল্যায়ন ।
১১ । অভিযোগ নিস্পত্তি ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ।
১২। নিরাপত্তা ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ।
১৩। ব্যক্তিগত নথী সংরক্ষণ।
মানবসম্পদ কর্মকর্তার দক্ষতা :-
একজন মানবসম্পদ কর্মকর্তার নিম্নে উল্লেখিত দক্ষতা ও ক্ষমতা থকবে-
১। আত্নবিশ্বাস, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা ও পারস্পারিক সম্পর্ক তৈরির ক্ষমতা।
২। নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ।
৩ । ইতিবাচক মনোভাব ৷
৪। শ্রম আইন ও কোম্পানীর নিয়মনীতি সম্পর্কে জ্ঞান ।
৫। যোগাযোগের দক্ষতা ।
৬ । সময় ব্যবস্থাপনা ৷
৭। উপস্থাপন ক্ষমতা, ইত্যাদি ।